« নীড়পাতা

আকাঙ্খার শহর


শামা, যাকে ঘিরেই গল্পটা আবৃত হয়েছে, তার চোখ দিয়ে গল্পটার বিভিন্ন প্লটে বিচরণ করছিলাম। সে যখন সদ্য বিবাহিত বরকে গাড়িতে রেখে রাস্তার সবুজ ঘাঁশের ঢাল বেয়ে নেমে পড়ে বংশাই নদীর পাড় ধরে ছুট লাগালো, মনে হলো যেনো সেই মেঠো পথে তার দৌড়ের আমিও সঙ্গী ছিলাম। একে একে তার সাথেই বেদেদের জলগ্রাম, মাঝনদীতে নৌকায় বসে মোটা চালের ভাত খাওয়ার সময়ে নৌকার ইতস্ততঃ দুলুনি, স্কুল জীবনের বান্ধবী পপি ও তাঁর দরিদ্র স্বামীর নিঃসন্তান সুখের সংসার, ফাহিমের সাথে প্রথম দেখার ক্ষণে মুখের বিরক্তি আর কালো রঙের শাড়ি সামলানোর চেষ্টা, অপ্সরার প্রতি আকুণ্ঠ মাতৃস্নেহ, নিচতলার খালাম্মার একাকীত্বের সময়গুলোতে নিজের খা খা করা বুক নিয়ে সামিল হওয়া, মৌসুমী আপার প্রতি ফাহিমের “অন্যরকম“ টানের কথা জানা সত্বেও নিজেকে ফাহিমের সাথে “বিতর্কে“ সামিল না করা - সব কিছুতেই যেনো আমার বিচরণ ছিলো, খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পারছিলাম যেনো সব কিছুকেই।

স্কুল জীবনে সুন্দরী মৌসুমী আপাকে ঘিরে ভালো লাগার ঘোরটা এই বয়সে এসেও টিকে আছে ফাহিমের। কিন্ত যখন পাবনার সেই দিন গুলোর কথা পড়ছিলাম নিজের অজান্তেই মনশ্চক্ষে প্রত্যক্ষ করছিলাম কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি পরিহিতা মৌসুমী আপার স্টেজে “বো“ হওয়া, গ্রীণরুমের পাশে গোলাপ বাগানে দাড়িয়ে থাকা ফাহিমের মনের ভেতরের জটিল রসায়নটাও যেনো হূদয়ঙ্গম করতে পারছিলাম, বাড়ি পৌঁছে দেবার সময় রিক্সায় মৌসুমী আপার চুল থেকে আসা সুগন্ধ যেনো ফাহিমের নাক ছাড়িয়ে আমার ইন্দ্রীয়কেও প্রভাবিত করেছে।

সম্পর্কের টানাপোড়েনে ভুগতে থাকা শামা-ফাহিম দম্পতি আবার নতুন করে শুরু করে তাদের পথচলা। কোন এক সুন্দর রোদ ঝলমলে শীতের সকালে অপ্সরাকে খালাম্মার কাছে রেখে দুজনে বেড়াতে যায় গাড়ো পাহারে। পথে ফাহিম আবিষ্কার করে সম্পূর্ণ নতুন এক শামাকে, এতোগুলো দিন সংসার করেও "এই শামা"-কে দেখার অবকাশ সে পায়নি। গাড়ো পাহারের রাণীর উষ্ণ আতিথেয়তায় তারা মুগ্ধ হয়ে শোনে বিলাতি সৈনিকের সাথে তার প্রেম উপাখ্যান। ফেরার পথে নিজের আকাঙ্খা গুলোর বাস্তব প্রতিফলনে বিভোর শামা নতুন করে শুরু করার ভরসা পায় ফাহিমের চোখে। হাতের মুঠিতে সযতনে সে ধরে থাকে একটি নীল রঙের পাহাড়ী ফুল!

-রিভিউটি লিখেছেন : ধুসর গোধূলি

প্রাঞ্জল ভাষার উপস্থাপনার বইটির পিডিএফ ভার্সন পড়ুন এখানে